সার্চ জায়ান্ট গুগলের আয়ের উৎস কি? অনেকের মনেই হয়তো ঘুরপাক খায় এই প্রশ্নটি। অনেকেই বলেন- গুগলের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে গুগল সার্চ ইঞ্জিন। এখন আপনার পরবর্তী প্রশ্ন হতে পারে সার্চ করার সময় আমি তো কোনো টাকা-পয়সা গুগলকে দিচ্ছি না। বিশ্বে অন্য কেউ দেয় এমন কথাও তো কখনো শোনা যায় নি, এমনকি গুগল কোনো পণ্য বানিয়ে বাজারে বিক্রিও করে না। তাহলে! গুগলের কাছে টাকা যায় কিভাবে? জানা গেছে, গুগল ডটকম তাদের সার্চ রেজাল্টের পাতায় বিভিন্ন ওয়েবসাইট মালিকদের নানারকম বিজ্ঞাপন দেয়ার অনুমতি দিয়ে থাকে। গুগলের আয়ের একটা বড় অংশই আসে এই সব বিজ্ঞাপন থেকে। খবর বিবিসি অনলাইনের।
বিবিসি জানিয়েছে, আর এসব কিছু ম্যানেজ করে গুগলের ‘অ্যাডওয়ার্ডস’ নামের একটি প্রোগ্রাম। ধরা যাক, আপনি গুগলে সার্চ দিলেন ঈদ কার্ড বিষয়ে। এখন এ বিষয়ে সার্চ রেজাল্টের সঙ্গে কিছু স্পন্সর্ড লিংকও আসে। মনে করুন ব্লু মাউন্টেন ডট কম-এর বানানো কার্ডের বিজ্ঞাপণ এসেছে আপনার সার্চ রেজাল্টের সঙ্গে। সার্চ রেজাল্ট না ঘেটে আপনি যদি ওই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে বসেন তবে গুগল ব্লু মাউন্টেন ডট কম-এর কাছ থেকে কিছু টাকা ফি বাবদ আদায় করে নেবে। যতোবার এমন ভাবে গুগল সার্চের সঙ্গে স্পন্সর্ড লিংকে ক্লিক পড়বে ততো টাকা গুনতে হবে বিজ্ঞাপন দাতা কোম্পানিকে।
এখন কেউ যদি গুগলে তার ওয়েব সাইটের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে চায় তাহলে বিজ্ঞাপনদাতাকে গুগলের ‘অ্যাডওয়ার্ড’ এ সাইন-আপ করতে হবে। তবে গুগল তার প্রতিটি সার্চ রেজাল্টেই আপনার দেয়া বিজ্ঞাপনটি নাও দেখাতে পারে। আর ভিজিটরদের প্রতিটি ক্লিকের জন্য এই রেট সর্বনিম্ন ৫ সেন্ট থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত।
প্রশ্ন উঠতে পারে এই রেট আবার কম-বেশি কেন? তাও আবার ৫ সেন্ট থেকে ৩০ ডলারের বিশাল পার্থক্য কেন? উত্তর হলো যে বিষয়ে গুগলে সার্চ কম হয় সে বিষয়ের রেটও কম। আবার যদি আপনার বিজ্ঞাপনের বিষয় হয় আমেরিকায় লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেকের সার্চের বিষয়, তবে বিজ্ঞাপনের রেটও যাবে বেড়ে। আর এক দিনে কোটি কোটি ব্যবহারকারী গুগল ভিজিটের ফলে যখন অ্যাডটির পরিচিতি বেড়ে যায়, তখন এক-একটি বিজ্ঞাপন গুগলকে প্রতি মুহূর্তে কতো টাকা এনে দিচ্ছে কল্পনা করতে পারেন?
সে বিবেচনায় গুগল আসলে সার্চ কোম্পানি নয়। গুগল আসলে অ্যাডভারটাইজিং কোম্পানি। একইভাবে গুগল মেইলেও বিজ্ঞাপন দেয়া হয় এবং তা কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ভিজিটের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপিতও হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, এই ব্যাপারটি যে শুধুমাত্র গুগল সাইটের জন্যই প্রযোজ্য তা নয়। প্রত্যেকটি ওয়েব সাইটই গুগলের অ্যাডওয়ার্ড প্রোগ্রামে সাইন-আপ করে যে কারও অ্যাড নিতে পারে। ধরা যাক আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে, নাম ‘আমার ওয়েবসাইট ডট কম’। এখন এই সাইটে আপনি যদি গুগলের বিজ্ঞাপন দিতে দেন, তবে গুগল তার বিজ্ঞাপনের স্টক থেকে একটি বিজ্ঞাপন হয়তো এখানে দিয়ে দিলো। এখান থেকে গুগল আগের মতোই বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা আদায় করে নেবে প্রতি ক্লিক হিসেব করে। আর সেখান থেকে একটি অংশ সে আপনাকেও দেবে আপনার সাইটের স্পেস গুগল ব্যবহার করেছে বলে।
এদিকে বিজ্ঞাপনদাতাদেরও প্রথম পছন্দ গুগল। কারণ বিশ্বব্যাপি গুগলের রয়েছে কোটি কোটি ব্যবহারকারী। এর ফলে একদিকে যেমন বিজ্ঞাপনদাতার পণ্যটি সারাবিশ্বের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তেমনি গুগল ও প্রচুর টাকা আয় করছে এসব বিজ্ঞাপন থেকে।
এই পদ্ধতিটি আসলেই কাজ করে কিনা এমন সন্দেহ থাকলে জেনে রাখুন, শুধু এ রকম বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই গুগল গত বছর আয় করেছে ১৫ বিলিয়ন ডলার!
No comments:
Post a Comment