Sunday, December 27, 2009
পায়রা তুমি কি কেবলই ছবি?
রাজধানী ঢাকার অধিবাসীরা কবুতর পোষা ছেড়ে দিচ্ছেন। এখন রাজাধনীর, এমনকি, উপকণ্ঠের আকাশেও আর পায়রার ঝাঁক ওড়ে না। কবুতরের নয়নমোহন চক্রাকারে দিক চক্রবালে ওড়ার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ থেকে নগরবাসী এখন বঞ্চিত। শোনা যায় না, কোনো ভবনের দু’তিন তলার কার্নিশে কিংবা ভেন্টিলেটরে বাসা বাঁধা কবুতর দম্পতির সাত সকালে বাক-বাকুম সোহাগ কুজন। ঘুম ভাঙে না আর কর্ণকুহরে বিরক্তির চেয়ে আনন্দময় সে মধুর গুঞ্জনে। দেখি না আর নোটন পায়রার ঝোটন বাঁধা নৃত্য। কবুতর শান্তির প্রতীক। নানা অনুষ্ঠানে কবুতর ছেড়ে আমরা শান্তি আনন্দবার্তা ঘোষণা করি। তবু সে কবুতর যে শান্তিতে আছে ঢাকায় তা বোঝার উপায় নেই। কবুতর এখন পোস্টারে, বইয়ের ছবিতে নির্বাক বন্দি। কেবল বাংলা আধুনিক গানে তার সবাক স্মৃতির রোমাঞ্চিত হয় — যা উড়ে যারে পাখি — সুদূর আকাশের নিলিমায়।
এ নিয়ে লিখেছেন বিবিসি’র অ্যালস্টেয়ার লসন। তিনি বলছেন একদার প্রিয় পালিত ও বুনো কবুতর বা পায়রারা দ্রুত লুপ্ত হচ্ছে। এর কারণ রাজধানীর বহুতল পশ ভবনগুলিতে আর পায়রার ঠাঁই হচ্ছে না। কেননা পায়রা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। খুব উঁচু ভবনে ওরা সাধারণ বাসা বাঁধে না। লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফালগার স্কয়ারের কথাই ভাবুন, দিনের বেলা খুব হাড় কাঁপানো শীত না হলে ওদের দেখা যাবে চঞ্চল পায়ে হেঁটে বেড়াতে পথচারী আগন্তুকদের আশেপাশেই। কখনও উড়ছে, কখনও বসছে। মানুষের কেউ কিন্তু বিরক্ত হচ্ছে না। এ বিষয়ে পুরনো ঢাকার শখে কবুতর পালনকর্তা মোহাম্মদ জাকির বলছেন, পায়রা আমাদের ঐতিহ্যে নিবিড় হয়ে আছে। রক্তকপোত দিয়েছে আমাদের স্বাধীনতার প্রেরণা। জাকির থাকেন পুরনো ঢাকার নির্জন একান্তে। তার বাড়িতে আছে একটা ছোট্ট একফালি উঠোন। আর পায়রা বসার ব্যবস্থা ও খোপবাসা। কিন্তু তাঁর মতে পায়রা কোথাও উড়ে গিয়ে বসে কিছু খেতে পারে এমন কোনোও মাঠ বা ক্ষেত নেই। তবে আমার এখানে কিছুটা হলেও তেমন পরিবেশ আছে বলেই আমি পায়রা পুষি বললেন জাকির।
আজ আর ঢাকাবাসীর পায়রার খোঁজ নেবার অবসর নেই। উৎসাহও নেই। পায়রা পোষা হয় ওটার ওড়া বা রেস দেখার আনন্দের জন্য। এখন ঘরের ভেতরের কালো বাকসে তার কৃত্রিম বিকল্প জুটেছে। পায়রা পোষার হবির দিনও তাই শেষ। জাকির জানান, তাঁর পায়রার শখ নিয়ে এখন লোকে হাসাহাসি করে।
ঢাকাবাসীর ছেলেমেয়েরা হয়তো বা কিছুকাল ছড়া কেটেছে, বাক-বাকুম পায়রা মাথায় দিয়ে টায়রা, বৌ সাজবে কালকি ইত্যাদি। কিন্ত সেকালের ঢাকা একালের নয়। তাই আমাদের শিশুরা হয়তো ভুলেই যাবে তাদের আগের শিশুদের পরম প্রিয় ছড়া ছিল একদিন ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো ঝোটন বেঁধেছে,ঃ কে দেখেছে কে দেখেছে দাদা দেখেছে, দাদার হাতে কলম ছিল ছুঁড়ে মেরেছে, উহ: বড্ডো লেগেছে। পরিবেশবিদেরা লুপ্তপ্রায় পশুপাখি রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ। যখন তাদের আমাদের চোখের সামনে আমাদের প্রিয় কপোত বিদায় নিচ্ছে তখন কিংবা তারপর হয়তো বলতে হবে ‘তুমি কি কেবল ছবি?’
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment